নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ফরিদপুর শাপলা সেফহোমে থেকে পঞ্চম শ্রেণী পড়–য়া দুই স্কুল ছাত্রী বিজয় দিবসের ছুটিতে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় পরিবারের কাছে আসা এক স্কুল ছাত্রীকে (১২) সন্ত্রাসীরা যৌনপল্লিতে নিয়ে ধর্ষণ করেছে। সাথে থাকা আরেক ছাত্রীকে (১৩) ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন ঘটনার সাথে জড়িত তিনজনকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে।
আটককৃতরা হলো গোয়ালন্দ উপজেলার উত্তর দৌলতদিয়া হোসেন মন্ডল পাড়ার ইসলাম প্রামানিকের ছেলে জীবন প্রামানিক (২৮), ফরিদপুরের ভাংগা উপজেলার গুলপালদী মোল্লা বাড়ির মালেক মোল্লার ছেলে সোহেল মোল্লা ওরফে ভাংগা সোহেল (২৮) ও উত্তর দৌলতদিয়া হোসেন মন্ডল পাড়ার মোহন মন্ডলের ছেলে ইউসুফ মন্ডল (২৭)। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতেই গোয়ালন্দ ঘাট থানায় ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছে। বুধবার দুপুরে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদেরকে পুলিশ আদালতে পাঠায়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সুবিধা বঞ্চিত দুইস্কুল ছাত্রী দৌলতদিয়ার একটি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়াশুনা করতো। চলতি বছর পঞ্চম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ফরিদপুর শাপলা সেফহোম থেকে পড়াশুনা করতে থাকে। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালনে পরিবারের সাথে ১১ ডিসেম্বর দুই বান্ধবী দৌলতদিয়ায় পরিবারের কাছে আসে। মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে দুইজন দৌলতদিয়া যৌনপল্লির জনৈক লেংড়ার দোকানে আচার কিনে ফিরছিল। পল্লির প্রবেশ পথ সংলগ্ন টোকাই মোল্লার বাড়ির সামনে পৌছলে তাদের ডাক দেয়। টোকাই মোল্লার বাড়িতে দেখতে পায় জীবন প্রামানিক, সোহেল ওরফে ভাংগা সোহেল ও ইউসুফ মন্ডল ছাড়া কেউ নেই। জীবন প্রামানিক ১২ বছর বয়সী পঞ্চম শ্রেণীর স্কুলছাত্রীকে ঝাপটে ধরে একটি কক্ষে নিয়ে দরজা বন্ধ করে। দাঁড়িয়ে থাকা সোহেল মোল্লা ও ইউসুফ মন্ডল অপর স্কুলছাত্রীকে ধরে আরেকটি কক্ষে নিয়ে যায়। জীবন জোরপূর্বক ওই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করলেও অপর কক্ষে রাখা আরেকজনকে ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়। দুই বান্ধবীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে এমনটি দেখে তাৎক্ষনিক বাড়ির গেটে তালা মেরে পুলিশে খবর দেয়। পরিবার ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে তাদেরকে উদ্ধার এবং আটককৃতদের থানায় নিয়ে আসে।
যৌনপল্লির কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জীবন প্রামানিক, সোহেল মোল্লা ওরফে ভাংগা সোহেল ও ইউসুফ মন্ডল এলাকায় চিহিৃত সন্ত্রাসী ও মাদকসেবী। নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী সর্বহারা দলের সাথে জড়িত। তাদের ভয়ে অনেকে মুখ খুলতে সাহস পাননা। দৌলতদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, আ.লীগ নেতা নুরুল ইসলাম মন্ডল জীবিত থাকা অবস্থায় তারা এলাকা ছাড়া ছিল। নুরুল ইসলাম মন্ডলের মৃত্যুর পর প্রভাবশালী ব্যক্তির প্রশ্রয়ে পুনরায় এলাকায় ফিরে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর বলেন, জীবন প্রামানিক, সোহেল মোল্লা ওরফে ভাংগা সোহেল ও ইউসুফের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, মাদক ও ডাকাতির মামলা রয়েছে। ওই মামলায় জামিনে তারা রয়েছে। থানায় ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে পৃথক দুটি মামলায় তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুধবার রাজবাড়ীর আদালতে পাঠানো হয়েছে। দুই স্কুলছাত্রীর ডাক্তারী পরীক্ষা করতে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।