০৫:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাংশা শহরের কাঁচাবাজারে রাতের বেলায় অর্ধশতাধিক দোকান উচ্ছেদ প্রচেষ্টা নিয়ে তুঘলকি কান্ড

মোক্তার হোসেন, পাংশাঃ রাজবাড়ীর পাংশা পৌর শহরের কাঁচাবাজারের অর্ধশতাধিক দোকান গত শুক্রবার রাতে আকস্মিকভাবে উচ্ছেদ প্রচেষ্টা নিয়ে তুঘলকি কান্ড ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে পৌরসভার মেয়র আব্দুল আল মাসুদের সাথে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদের উচ্চবাচ্য বাক-বিতন্ডার সৃষ্টি হয়।

খবর পেয়ে রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. জিল্লুল হাকিম বাজারে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। রাতেই স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

জানা যায়, পাংশা পৌরসভার কাঁচাবাজারে রাজবাড়ী জেলা পরিষদ ও পাংশা উপজেলা পরিষদের জায়গা রয়েছে। বাজারের একটি জমি ক্রয়সূত্রে মালিক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ। বছর খানেক হলো ক্রয়সূত্রে মালিক হলেও কাঁচাবাজার হওয়ায় জমির মিটিশন হচ্ছেনা। সাম্প্রতিক সময়ে জমি অধিগ্রহণ করে বাজার সম্প্রসারণ করে সরকারী রাজস্ব আদায়ের মতামত ওঠে।

শুক্রবার রাত ৮টার দিকে লোকজন নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় প্রতিষ্ঠিত বাজারের দোকান নিয়মনীতি বহির্ভূতভাবে উচ্ছেদ করার প্রচেষ্টা চালান। এ সময় দোকানীদের মাঝে আতংকের সৃষ্টি হয় এবং বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। দোকানদাররা বাজারের শৃঙ্খলা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিমের স্মরণাপন্ন হয়। সাংসদ জিল্লুল হাকিম স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।

রাতেই পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপুল চন্দ্র দাস, পাংশা মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, পৌরসভার মেয়র আব্দুল আল মাসুদ ও এসিল্যান্ড নুজহাত তাসনীম আওন ঘটনাস্থলে পৌঁছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ফরিদ হাসান ওদুদ এবং দোকানদারদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। এরমধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ ও পৌরসভার মেয়র আব্দুল আল মাসুদ পরস্পরের মধ্যে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। মেয়র আব্দুল আল মাসুদ রাতের বেলায় আকস্মিকভাবে কাঁচাবাজার উচ্ছেদ প্রক্রিয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ইউএনও বিপুল চন্দ্র দাস ও ওসি মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বাজারে ব্যবসা পরিচালনা এবং জমি মেপে সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দেন। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সার্বিক দিক-নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত প্রদানের ফলে রাত সাড়ে ১১টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

শনিবার কাঁচাবাজারের দোকানদাররা পূর্বাবস্থায় ব্যবসা করলেও দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে বলে জানান কয়েক দোকানী। শনিবার সকালে কাঁচাবাজারের সভাপতি লাল্টু বিশ্বাস, দোকানদার সিদ্দিকুর রহমান, দেলোয়ার হোসেন, আকমল ফকীর ও সুবোল চন্দ্র দাস সহ কয়েকজনের সাথে কথা হয় এ প্রতিনিধির। আলাপচারিতায় তারা জানায়, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে আকস্মিকভাবে উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ কাঁচাবাজারে বাদশা কমিশনারের দোকানে কাঁচাবাজারের দোকানীদের ডেকে নিয়ে রাতের মধ্যে বাজার সরিয়ে নিতে নির্দেশনা দেন। এ সময় অপ্রস্তুত প্রায় অর্ধশত দোকানী দিশাহারা হয়ে পড়েন এবং আতংক ছড়িয়ে পড়ে।

কাঁচাবাজারের দোকানীরা জানায়, ১৯৯৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সাংস্কৃতিক বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপিকা জাহানারা বেগম পাংশা পৌরসভার কাঁচাবাজারের ভিত্তিপ্রস্তর নামফলক উদ্বোধন করেন। তৎকালীন পৌরসভার চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ সরদার ওইস্থানে কাঁচাবাজার বসান। সে সময় থেকে দোকানীরা নিজ ব্যবস্থাপনায় টিনের ছাউনী দিয়ে ব্যবসা করছে। বছর খানেক হলো জমির ক্রয়কৃত মালিক হিসেবে মন্ডল প্লাজার নামে ফরিদ হাসান ওদুদ মাসিক তিনশ টাকা করে রশিদের মাধ্যমে ভাড়া আদায় করেন।
প্রসঙ্গতঃ বছর খানেক আগে পাংশা পৌরসভার কাঁচাবাজারে উপজেলা পরিষদের জায়গায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে শেড নির্মাণের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের ফলে শেড নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অদ্যাবধি ওই অবস্থায় পড়ে আছে নির্মাণাধীন শেড।

ট্যাগঃ
রিপোর্টারের সম্পর্কে জানুন

Rajbari Mail

জনপ্রিয় পোস্ট

বালিয়াকান্দিতে আনারস প্রতীকের দুই সমর্থকে হাতুড়ী পিটিয়ে জখমের অভিযোগ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে

পাংশা শহরের কাঁচাবাজারে রাতের বেলায় অর্ধশতাধিক দোকান উচ্ছেদ প্রচেষ্টা নিয়ে তুঘলকি কান্ড

পোস্ট হয়েছেঃ ১০:১০:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২০

মোক্তার হোসেন, পাংশাঃ রাজবাড়ীর পাংশা পৌর শহরের কাঁচাবাজারের অর্ধশতাধিক দোকান গত শুক্রবার রাতে আকস্মিকভাবে উচ্ছেদ প্রচেষ্টা নিয়ে তুঘলকি কান্ড ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে পৌরসভার মেয়র আব্দুল আল মাসুদের সাথে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদের উচ্চবাচ্য বাক-বিতন্ডার সৃষ্টি হয়।

খবর পেয়ে রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. জিল্লুল হাকিম বাজারে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। রাতেই স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

জানা যায়, পাংশা পৌরসভার কাঁচাবাজারে রাজবাড়ী জেলা পরিষদ ও পাংশা উপজেলা পরিষদের জায়গা রয়েছে। বাজারের একটি জমি ক্রয়সূত্রে মালিক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ। বছর খানেক হলো ক্রয়সূত্রে মালিক হলেও কাঁচাবাজার হওয়ায় জমির মিটিশন হচ্ছেনা। সাম্প্রতিক সময়ে জমি অধিগ্রহণ করে বাজার সম্প্রসারণ করে সরকারী রাজস্ব আদায়ের মতামত ওঠে।

শুক্রবার রাত ৮টার দিকে লোকজন নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় প্রতিষ্ঠিত বাজারের দোকান নিয়মনীতি বহির্ভূতভাবে উচ্ছেদ করার প্রচেষ্টা চালান। এ সময় দোকানীদের মাঝে আতংকের সৃষ্টি হয় এবং বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। দোকানদাররা বাজারের শৃঙ্খলা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিমের স্মরণাপন্ন হয়। সাংসদ জিল্লুল হাকিম স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।

রাতেই পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপুল চন্দ্র দাস, পাংশা মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, পৌরসভার মেয়র আব্দুল আল মাসুদ ও এসিল্যান্ড নুজহাত তাসনীম আওন ঘটনাস্থলে পৌঁছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ফরিদ হাসান ওদুদ এবং দোকানদারদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। এরমধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ ও পৌরসভার মেয়র আব্দুল আল মাসুদ পরস্পরের মধ্যে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। মেয়র আব্দুল আল মাসুদ রাতের বেলায় আকস্মিকভাবে কাঁচাবাজার উচ্ছেদ প্রক্রিয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ইউএনও বিপুল চন্দ্র দাস ও ওসি মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বাজারে ব্যবসা পরিচালনা এবং জমি মেপে সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দেন। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সার্বিক দিক-নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত প্রদানের ফলে রাত সাড়ে ১১টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

শনিবার কাঁচাবাজারের দোকানদাররা পূর্বাবস্থায় ব্যবসা করলেও দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে বলে জানান কয়েক দোকানী। শনিবার সকালে কাঁচাবাজারের সভাপতি লাল্টু বিশ্বাস, দোকানদার সিদ্দিকুর রহমান, দেলোয়ার হোসেন, আকমল ফকীর ও সুবোল চন্দ্র দাস সহ কয়েকজনের সাথে কথা হয় এ প্রতিনিধির। আলাপচারিতায় তারা জানায়, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে আকস্মিকভাবে উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ কাঁচাবাজারে বাদশা কমিশনারের দোকানে কাঁচাবাজারের দোকানীদের ডেকে নিয়ে রাতের মধ্যে বাজার সরিয়ে নিতে নির্দেশনা দেন। এ সময় অপ্রস্তুত প্রায় অর্ধশত দোকানী দিশাহারা হয়ে পড়েন এবং আতংক ছড়িয়ে পড়ে।

কাঁচাবাজারের দোকানীরা জানায়, ১৯৯৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সাংস্কৃতিক বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপিকা জাহানারা বেগম পাংশা পৌরসভার কাঁচাবাজারের ভিত্তিপ্রস্তর নামফলক উদ্বোধন করেন। তৎকালীন পৌরসভার চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ সরদার ওইস্থানে কাঁচাবাজার বসান। সে সময় থেকে দোকানীরা নিজ ব্যবস্থাপনায় টিনের ছাউনী দিয়ে ব্যবসা করছে। বছর খানেক হলো জমির ক্রয়কৃত মালিক হিসেবে মন্ডল প্লাজার নামে ফরিদ হাসান ওদুদ মাসিক তিনশ টাকা করে রশিদের মাধ্যমে ভাড়া আদায় করেন।
প্রসঙ্গতঃ বছর খানেক আগে পাংশা পৌরসভার কাঁচাবাজারে উপজেলা পরিষদের জায়গায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে শেড নির্মাণের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের ফলে শেড নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অদ্যাবধি ওই অবস্থায় পড়ে আছে নির্মাণাধীন শেড।