০৭:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পদ্মার চরে কাঁদামাটিতে পুতে রাখা দুই হাত বিচ্ছিন্ন লাশটি স্কুল ছাত্র মিরাজের

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ গতকাল সোমবার রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার কাওয়ালজানি এলাকার দুর্গম পদ্মার চরে কাঁদা মাটিতে পুতে রাখা এক তরুণের দুই হাত বিচ্ছিন্ন অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর আগে সকালে এলাকার লোকজন নদীর পাড় দিয়ে যাওয়ার সময় লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পুলিশকে অবগত করেন।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে মুঠোফোনে ডেকে নেওয়ার পর থেকে নিখোঁজ তরুণ সুজন খান ওরফে মিরাজের (১৬) লাশ বলে পরিবার দাবী করেছে। এর আগে পুলিশ সোমবার সন্ধ্যায় অজ্ঞাত হিসেবে লাশের ময়না তদন্তের জন্য রাজবাড়ী পাঠায়। মিরাজ গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের উত্তর চর পাচুরিয়া গ্রামের সিরাজ খার ছেলে। সে দৌলতদিয়া মডেল হাই স্কুলের নবম শ্রেণীর মানবিক বিভাগের ছাত্র।

পুলিশ ও এলাকার কয়েকজন জানান, সোমবার (৩১ আগষ্ট) বেলা দশটার দিকে উপজেলার দেবগ্রাম ইউপির কাওয়ালজানি এলাকার পদ্মা নদীর পাড় দিয়ে এলাকার কয়েকজন যাওয়ার সময় কাঁদাপানিতে অর্ধেক পুতে রাখা একটি লাশ দেখতে পায়। বিষয়টি তাৎক্ষনিক দেবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলামকে অবগত করলে তিনি গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে দুপুরে পুলিশ কাঁদামাটি থেকে অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধার করে। এসময় তরুণের বাম হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন এবং ডান হাত শরীরের কাঁদ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। বিচ্ছিন্ন কব্জি পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি। এছাড়া শরীরে ধারালো অস্ত্রের ৩-৪টি আঘাতের চিহৃ রয়েছে।

মিরাজের নিকট আত্মীয় দেবগ্রাম ইউপির ৯নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুস সালাম জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে বাড়িতে খাবার খাচ্ছিল মিরাজ। মুঠোফোনে অজ্ঞাত ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। এসময় বাড়িতে মা-বাবা না থাকায় ছোট বোনের কাছে জরুরী ফোনের কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। এরপর থেকে মিরাজের হদিস পাওয়া যায়নি। পরদিন শুক্রবার মিরাজের বাবা সিরাজ খা গোয়ালন্দ ঘাট থানায় একটি নিখোঁজ সংক্রান্ত সাধারণ ডায়রী করেন।

তিনি বলেন, সোমবার সকালে স্থানীয় লোকজন নদীর পাড় দিয়ে যাওয়ার সময় উপুর করে কাঁদাপানিতে গেড়ে রাখা লাশ দেখে পুলিশে খবর দেয়। লাশ উত্তোলনের পর আমরা লাশের কপালে থাকা কাটা দাগ, পড়নের প্যান্ট ও বয়স দেখে মিরাজের লাশ হিসেবে শনাক্ত করেছি। পরিবারের চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে মিরাজ সবার ছোট।

মিরাজের বড় ভাই সেলিম খা বলেন, গত বছর নদী ভাঙনের কারণে দেবগ্রাম থেকে বাড়ি ভেঙে উত্তর চর পাচুরিয়ায় বাড়ি করি। আমাদের সাথে কারো কোন বিরোধ নেই। সোমবার বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে পদ্মার চরে যে লাশ পাওয়া গেছে সেটি ছোট ভাই মিরাজের। কারা মিরাজকে ডেকে নিয়ে এভাবে হত্যা করেছে বলতে পারছি না। আমরা খুনীদের ফাঁসি চাই। আজ (মঙ্গলবার) ময়না তদন্ত শেষে লাশ বাড়িতে এনে দাফন করা হবে।

দেবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলামও উদ্ধার হওয়া লাশ মিরাজের বলে শনাক্ত করে রাজবাড়ীমেইলকে বলেন, লাশে পচন ধরায় কিছু অস্পষ্ট থাকলেও প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে লাশটি নিখোঁজ মিরাজ খার হবে।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল-তায়াবীর বলেন, দুই হাত বিচ্ছিন্ন তরুণের পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় সোমবার সন্ধ্যায় অজ্ঞাত হিসেবে ময়না তদন্তে পাঠায়। তবে পরিবার থেকে মিরাজের লাশ দাবী করে রাতেই অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামীকে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। হত্যাকান্ডের প্রকৃত কারণ উদঘাটনে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।

ট্যাগঃ
রিপোর্টারের সম্পর্কে জানুন

Rajbari Mail

জনপ্রিয় পোস্ট

বালিয়াকান্দিতে আনারস প্রতীকের দুই সমর্থকে হাতুড়ী পিটিয়ে জখমের অভিযোগ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে

পদ্মার চরে কাঁদামাটিতে পুতে রাখা দুই হাত বিচ্ছিন্ন লাশটি স্কুল ছাত্র মিরাজের

পোস্ট হয়েছেঃ ০৭:৫৩:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২০

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ গতকাল সোমবার রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার কাওয়ালজানি এলাকার দুর্গম পদ্মার চরে কাঁদা মাটিতে পুতে রাখা এক তরুণের দুই হাত বিচ্ছিন্ন অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর আগে সকালে এলাকার লোকজন নদীর পাড় দিয়ে যাওয়ার সময় লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পুলিশকে অবগত করেন।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে মুঠোফোনে ডেকে নেওয়ার পর থেকে নিখোঁজ তরুণ সুজন খান ওরফে মিরাজের (১৬) লাশ বলে পরিবার দাবী করেছে। এর আগে পুলিশ সোমবার সন্ধ্যায় অজ্ঞাত হিসেবে লাশের ময়না তদন্তের জন্য রাজবাড়ী পাঠায়। মিরাজ গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের উত্তর চর পাচুরিয়া গ্রামের সিরাজ খার ছেলে। সে দৌলতদিয়া মডেল হাই স্কুলের নবম শ্রেণীর মানবিক বিভাগের ছাত্র।

পুলিশ ও এলাকার কয়েকজন জানান, সোমবার (৩১ আগষ্ট) বেলা দশটার দিকে উপজেলার দেবগ্রাম ইউপির কাওয়ালজানি এলাকার পদ্মা নদীর পাড় দিয়ে এলাকার কয়েকজন যাওয়ার সময় কাঁদাপানিতে অর্ধেক পুতে রাখা একটি লাশ দেখতে পায়। বিষয়টি তাৎক্ষনিক দেবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলামকে অবগত করলে তিনি গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে দুপুরে পুলিশ কাঁদামাটি থেকে অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধার করে। এসময় তরুণের বাম হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন এবং ডান হাত শরীরের কাঁদ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। বিচ্ছিন্ন কব্জি পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি। এছাড়া শরীরে ধারালো অস্ত্রের ৩-৪টি আঘাতের চিহৃ রয়েছে।

মিরাজের নিকট আত্মীয় দেবগ্রাম ইউপির ৯নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুস সালাম জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে বাড়িতে খাবার খাচ্ছিল মিরাজ। মুঠোফোনে অজ্ঞাত ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। এসময় বাড়িতে মা-বাবা না থাকায় ছোট বোনের কাছে জরুরী ফোনের কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। এরপর থেকে মিরাজের হদিস পাওয়া যায়নি। পরদিন শুক্রবার মিরাজের বাবা সিরাজ খা গোয়ালন্দ ঘাট থানায় একটি নিখোঁজ সংক্রান্ত সাধারণ ডায়রী করেন।

তিনি বলেন, সোমবার সকালে স্থানীয় লোকজন নদীর পাড় দিয়ে যাওয়ার সময় উপুর করে কাঁদাপানিতে গেড়ে রাখা লাশ দেখে পুলিশে খবর দেয়। লাশ উত্তোলনের পর আমরা লাশের কপালে থাকা কাটা দাগ, পড়নের প্যান্ট ও বয়স দেখে মিরাজের লাশ হিসেবে শনাক্ত করেছি। পরিবারের চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে মিরাজ সবার ছোট।

মিরাজের বড় ভাই সেলিম খা বলেন, গত বছর নদী ভাঙনের কারণে দেবগ্রাম থেকে বাড়ি ভেঙে উত্তর চর পাচুরিয়ায় বাড়ি করি। আমাদের সাথে কারো কোন বিরোধ নেই। সোমবার বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে পদ্মার চরে যে লাশ পাওয়া গেছে সেটি ছোট ভাই মিরাজের। কারা মিরাজকে ডেকে নিয়ে এভাবে হত্যা করেছে বলতে পারছি না। আমরা খুনীদের ফাঁসি চাই। আজ (মঙ্গলবার) ময়না তদন্ত শেষে লাশ বাড়িতে এনে দাফন করা হবে।

দেবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলামও উদ্ধার হওয়া লাশ মিরাজের বলে শনাক্ত করে রাজবাড়ীমেইলকে বলেন, লাশে পচন ধরায় কিছু অস্পষ্ট থাকলেও প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে লাশটি নিখোঁজ মিরাজ খার হবে।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল-তায়াবীর বলেন, দুই হাত বিচ্ছিন্ন তরুণের পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় সোমবার সন্ধ্যায় অজ্ঞাত হিসেবে ময়না তদন্তে পাঠায়। তবে পরিবার থেকে মিরাজের লাশ দাবী করে রাতেই অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামীকে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। হত্যাকান্ডের প্রকৃত কারণ উদঘাটনে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।