০৮:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংকট কাটিয়ে রাজবাড়ীর পাট চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে

কামাল হোসেন, রাজবাড়ীঃ রাজবাড়ীতে পাট চাষের শুরুতে অতিরিক্ত বৃষ্টি, পোকার আক্রমণ, শ্রমিক সংকটে শ্রম মূল্য বৃদ্ধি, জমিতে সেচ ও জাগের পানি সংকটসহ নানা সংকট মোকাবেলা করে মাস খানেক হলো সোনালী আঁশ পাটের উৎপাদন খ্যাত রাজবাড়ীর চাষিরা নতুন পাট ঘরে তুলেছেন। পাটের দাম ভালো পাওয়ায় তাদের মুখে হাসি ফিরেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হলেও এবার রাজবাড়ীতে পাটের চাষ হয়েছে ৪৯ হাজার ৮২২ হেক্টর জমিতে। গত বারের তুলনায় ৮২ হেক্টর বেশী। এছাড়া এবার পাট উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ৫লাখ ৮০হাজার ২০০ বেল হলেও এখন পর্যন্ত পাটের উৎপাদন হয়েছে ৬লাখ ২০ হাজার ২২ বেল। যা গত বারের তুলনায় ৩৯ হাজার ৮২২ বেল বেশী। উৎপাদন আরও বাড়বে। তবে প্রতিকুল আবহাওয়া ও শ্রম মূল্য বৃদ্ধিতে পাট চাষে খরচ বেড়ে যাওয়ায় চাষিরা লাভ নিয়ে চিন্তিত থাকলেও শেষ পর্যন্ত বাজারে পাটের দাম ভালো পাওয়ায় তারা লাভের মূখ দেখেছেন।

সদর উপজেলাসহ গোয়ালন্দ, পাংশা, বালিয়াকান্দি ও কালুখালী উপজেলার কয়েকজন পাটচাষি জানায়, এবার পাট চাষ করতে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। শুরুতে অতিরিক্ত বৃষ্টি ও পোকার আক্রমণে পাটের চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাট কাটার সময়ে খরা পরিস্থিতির কারণে খাল-বিল, ডোবা-নালায় পানি না থাকায় ২-৩ কিলোমিটার দুরে নিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে। এ কারণে প্রতি বিঘা জমিতে ৪-৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। এছাড়া এবার পাট চাষের পুরো মৌসুম জুড়ে বেশী মজুরিতে শ্রমিক খাটাতে হয়েছে। গত বছর ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় দিন চুক্তিতে শ্রমিক পাওয়া গেলেও এবার তা বেড়ে ৮০০ থেকে ১হাজার টাকা হয়েছে। এছাড়া বীজ, কীটনাশক, সারসহ চাষের অন্যান্য খরচও বেড়েছে। ফলে জাগ দেয়া, ছাড়ানোসহ সব মিলিয়ে বিঘা প্রতি জমিতে প্রায় ৪-৫ হাজার টাকা খরচ বেশী হয়েছে। পাটের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেলেও বাজারে পাটের মান ভেদে মণ প্রতি ৮শ থেকে ১হাজার টাকা লাভ হওয়ায় খুশি চাষিরা।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহীদ ওয়াহাবপুর ইউপির বড় নুরপুর গ্রামের পাট চাষি আব্দুল কাদের প্রামানিক বলেন, এবার সোয়া দুই বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছি। শুরু থেকে নানা সমস্যার সম্মুখিন হয়েছিলাম। সবচেয়ে বেশী সমস্যা হয়েছিলো পাট কাটা ও জাগ দেয়া নিয়ে, পাট কাটায় শ্রমিক নিতে হয়েছিলো ৭০০-৮০০ টাকা দিয়ে। পাট ছাড়াতে শ্রমিক মজুরি দিতে হয়েছে জনপ্রতি ১হাজার টাকা করে। এবং খরার কারণে ডোবা-নালায় পানি না থাকায় জমি থেকে প্রায় ৩কিলোমিটার দুরে নিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রচুর পরিবহন খরচ হয়েছে। যাই হোক সর্বশেষ পাটের দাম ভালো পাওয়ায় সব কষ্ট উষুল হয়েছে।

সদর উপজেলার খানখানাপুর বাজার কাদরিয়া ট্রেডার্স বানিজ্যালয়ের পাট ব্যবসায়ী ফজলু মোল্লা বলেন, এবার এ অঞ্চলে ব্যাপক পাট চাষ হয়েছে। গতবারের তুলনায় এবার পাটের মানও ভাল। ফলে কৃষকরা দামও ভালই পাচ্ছে। এমন দামে পাট চাষিরা বাজারে পাট বিক্রি করে খুশি মনেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এসএম সহীদ নূর আকবর বলেন, প্রতিকুল আবহাওয়া ও শ্রমিক সংকটের কারণে এবার পাট আবাদের ক্ষেত্রে খরচ বেশী হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত বাজারে পাটের দাম ভালো পাওয়ায় চাষিরা লাভের মুখ দেখেছেণ। এছাড়া পলিমাটি, জৈব সারের ব্যবহার ও বন্যার পানি প্রবেশ না করায় এবার জেলায় পাটের আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। আর অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই পাট কাটা শেষ হবে। এবার পাটের ফলন বেশী ও দামও ভালো পাওয়ায় খুশি চাষিরা।

ট্যাগঃ
রিপোর্টারের সম্পর্কে জানুন

Rajbari Mail

জনপ্রিয় পোস্ট

বালিয়াকান্দিতে আনারস প্রতীকের দুই সমর্থকে হাতুড়ী পিটিয়ে জখমের অভিযোগ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে

সংকট কাটিয়ে রাজবাড়ীর পাট চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে

পোস্ট হয়েছেঃ ১০:১০:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ অগাস্ট ২০২২

কামাল হোসেন, রাজবাড়ীঃ রাজবাড়ীতে পাট চাষের শুরুতে অতিরিক্ত বৃষ্টি, পোকার আক্রমণ, শ্রমিক সংকটে শ্রম মূল্য বৃদ্ধি, জমিতে সেচ ও জাগের পানি সংকটসহ নানা সংকট মোকাবেলা করে মাস খানেক হলো সোনালী আঁশ পাটের উৎপাদন খ্যাত রাজবাড়ীর চাষিরা নতুন পাট ঘরে তুলেছেন। পাটের দাম ভালো পাওয়ায় তাদের মুখে হাসি ফিরেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হলেও এবার রাজবাড়ীতে পাটের চাষ হয়েছে ৪৯ হাজার ৮২২ হেক্টর জমিতে। গত বারের তুলনায় ৮২ হেক্টর বেশী। এছাড়া এবার পাট উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ৫লাখ ৮০হাজার ২০০ বেল হলেও এখন পর্যন্ত পাটের উৎপাদন হয়েছে ৬লাখ ২০ হাজার ২২ বেল। যা গত বারের তুলনায় ৩৯ হাজার ৮২২ বেল বেশী। উৎপাদন আরও বাড়বে। তবে প্রতিকুল আবহাওয়া ও শ্রম মূল্য বৃদ্ধিতে পাট চাষে খরচ বেড়ে যাওয়ায় চাষিরা লাভ নিয়ে চিন্তিত থাকলেও শেষ পর্যন্ত বাজারে পাটের দাম ভালো পাওয়ায় তারা লাভের মূখ দেখেছেন।

সদর উপজেলাসহ গোয়ালন্দ, পাংশা, বালিয়াকান্দি ও কালুখালী উপজেলার কয়েকজন পাটচাষি জানায়, এবার পাট চাষ করতে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। শুরুতে অতিরিক্ত বৃষ্টি ও পোকার আক্রমণে পাটের চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাট কাটার সময়ে খরা পরিস্থিতির কারণে খাল-বিল, ডোবা-নালায় পানি না থাকায় ২-৩ কিলোমিটার দুরে নিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে। এ কারণে প্রতি বিঘা জমিতে ৪-৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। এছাড়া এবার পাট চাষের পুরো মৌসুম জুড়ে বেশী মজুরিতে শ্রমিক খাটাতে হয়েছে। গত বছর ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় দিন চুক্তিতে শ্রমিক পাওয়া গেলেও এবার তা বেড়ে ৮০০ থেকে ১হাজার টাকা হয়েছে। এছাড়া বীজ, কীটনাশক, সারসহ চাষের অন্যান্য খরচও বেড়েছে। ফলে জাগ দেয়া, ছাড়ানোসহ সব মিলিয়ে বিঘা প্রতি জমিতে প্রায় ৪-৫ হাজার টাকা খরচ বেশী হয়েছে। পাটের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেলেও বাজারে পাটের মান ভেদে মণ প্রতি ৮শ থেকে ১হাজার টাকা লাভ হওয়ায় খুশি চাষিরা।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহীদ ওয়াহাবপুর ইউপির বড় নুরপুর গ্রামের পাট চাষি আব্দুল কাদের প্রামানিক বলেন, এবার সোয়া দুই বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছি। শুরু থেকে নানা সমস্যার সম্মুখিন হয়েছিলাম। সবচেয়ে বেশী সমস্যা হয়েছিলো পাট কাটা ও জাগ দেয়া নিয়ে, পাট কাটায় শ্রমিক নিতে হয়েছিলো ৭০০-৮০০ টাকা দিয়ে। পাট ছাড়াতে শ্রমিক মজুরি দিতে হয়েছে জনপ্রতি ১হাজার টাকা করে। এবং খরার কারণে ডোবা-নালায় পানি না থাকায় জমি থেকে প্রায় ৩কিলোমিটার দুরে নিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রচুর পরিবহন খরচ হয়েছে। যাই হোক সর্বশেষ পাটের দাম ভালো পাওয়ায় সব কষ্ট উষুল হয়েছে।

সদর উপজেলার খানখানাপুর বাজার কাদরিয়া ট্রেডার্স বানিজ্যালয়ের পাট ব্যবসায়ী ফজলু মোল্লা বলেন, এবার এ অঞ্চলে ব্যাপক পাট চাষ হয়েছে। গতবারের তুলনায় এবার পাটের মানও ভাল। ফলে কৃষকরা দামও ভালই পাচ্ছে। এমন দামে পাট চাষিরা বাজারে পাট বিক্রি করে খুশি মনেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এসএম সহীদ নূর আকবর বলেন, প্রতিকুল আবহাওয়া ও শ্রমিক সংকটের কারণে এবার পাট আবাদের ক্ষেত্রে খরচ বেশী হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত বাজারে পাটের দাম ভালো পাওয়ায় চাষিরা লাভের মুখ দেখেছেণ। এছাড়া পলিমাটি, জৈব সারের ব্যবহার ও বন্যার পানি প্রবেশ না করায় এবার জেলায় পাটের আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। আর অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই পাট কাটা শেষ হবে। এবার পাটের ফলন বেশী ও দামও ভালো পাওয়ায় খুশি চাষিরা।