০৫:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গোয়ালন্দে পদ্মার ভাঙনঃ থেমে আছে ঘাট আধুনিকায়ন কাজ

বিশেষ প্রতিনিধিঃ পদ্মা-যমুনা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। নদীতে স্রোত এবং ঝড়ো বাতাসে এবার আগে ভাগেই ভাঙন শুরু হয়েছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ঘাট এলাকায়। অথচ এই বর্ষা মৌসুমের আগেই দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটকে আধুনিক নৌবন্দরে উন্নীত করনের কাজ শুরুর কথা ছিল। এখন পর্যন্ত তার কোন গতি না দেখায় বর্ষার আগে কাজ শুরু নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর ফাইল চালাচলি ও বুয়েটের ছাড়পত্রের অপেক্ষায় আটকে আছে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাট নৌবন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্পের কাজ। পাউবোর দাবী, প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের বরাদ্দের অর্থ দিয়ে কাজ শুরু করতে অনুমোদনের জন্য বিআইডব্লিউটিএকে চিঠি দিয়েও তার উত্তর মিলছেনা। বিআইডব্লিউটিএ বলছে, জমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় এবং বুয়েট থেকে চুড়ান্ত নকশার অপেক্ষায় আছেন। ফলে ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়তে যাচ্ছে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট, ফেরি ঘাটসহ আশপাশের জনপদ। ভাঙন ঝুঁকিতে থাকবে দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের ৮টি গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবার।

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট ও এর পশ্চিমে দেবগ্রাম প্রান্তে ৬ কিলোমিটার এবং পাটুরিয়া ঘাটের দুই কিলোমিটার স্থায়ীভাবে আধুনিকায়ন করতে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক গত বছর জানুয়ারীতে ৬৮০ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শুরু করতে না পারায় এবং নির্মাণ সামগ্রীর উর্দ্বগতির কারনে কাজের বর্তমান ব্যায় বাড়িয়ে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৩৫১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। বর্ষার আগেই কাজের অনুমোতি চেয়ে পাউবো ২৭ এপ্রিল বিআইডব্লিউটিএ প্রকল্প পরিচালকের কাছে চিঠি দিয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া লালু মন্ডল পাড়া পদ্মার পাড়ে শূণ্য ভিটায় ছোট্র একটি মুদি দোকান করে দুলাল মন্ডল আশায় আছেন যদি নদী শাসনের কাজ শুরু হয় তাহলে চিন্তা নাই। দুলাল মন্ডল বলেন, ঈদে আগে বৃষ্টি শুরু থেকে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে তার প্রায় ৭ বিঘা জমি বিলীন হয়েছে। এখন শূন্য ভিটায় ছাপড়া ঘর আর দোকান ছাড়া কিছুই নেই তার।

দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল বলেন, প্রতি বছর শুধু মাপঝোপ হয়, কাজ কিছুই হয়না। চার বছর ধরে স্থায়ী কাজ হবে বলে শুনছি। বিআইডব্লিউটিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের স্বার্থ হাসিলে পানি বৃদ্ধির সময় জিওব্যাগ ফেলে। বর্ষার আগে কাজ শুরু না হলে লঞ্চ ও ফেরিঘাটসহ আশপাশের পাঁচটি গ্রামের প্রায় ৮০০ পরিবার ভাঙন ঝুঁকিতে থাকবে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা মুন্সী বলেন, গত কয়েক বছরে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন হয়েছে। ভূমিহীন হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। লঞ্চ ও ফেরি ঘাট ভাঙনের শিকার হয়েছে কয়েকবার। আমরা অতি দ্রুত ঘাট এলাকাকে স্থায়ীভাবে রক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি।

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, ২৭ এপ্রিল বিআইডব্লিউটিএ প্রকল্প পরিচালকের কাছে কাজ শুরুর অনুমোতি চেয়ে চিঠি দিয়েছি। এখন পর্যন্ত তার জবাব না আসায় কাজ শুরু করতে পারছিনা। বর্ষার আগে কাজ শুরু না হলে ভাঙন দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে কাজ করবো। তবে এটা স্থায়ী কোন সমাধান নয় বলেও তিনি মনে করেন।

বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, দৌলতদিয়ায় ৬ এবং পাটুরিয়ায় ২ কিলোমিটার এলাকায় আধুনিকায়নের জন্য ১ হাজার ৩৫১ কোটি ৭০ লাখ টাকা একনেক থেকে পাশ হয়েছে। তবে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় জমি অধিগ্রহণের কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সম্পন্ন হয়ে আসেনি। এছাড়া বুয়েট থেকে নকশার চুড়ান্ত অনুমোদন হয়ে আসেনি। যে কারনে কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নদী বন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্পের পরিচালক ও বিআইডব্লিউটিএর তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারিকুল হাসান বলেন, ২১ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করতে এবং যাত্রী সেবার মান উন্নয়নে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাট আধুনিকায়নে ১৩৫১ কোটি ৭০ লাখ টাকার প্রকল্প একনেকে পাস হয়েছে। দৌলতদিয়া এবং পাটুরিয়ায় ৮টি করে ফেরি ঘাট, পৃথক লঞ্চ ঘাট, সড়ক নির্মাণসহ নদীর তীর রক্ষায় কাজ হবে। বুয়েট থেকে নকশার চূড়ান্ত ডিজাইনের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। এছাড়া জমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন এবং নকশা হাতে পেলেই কাজ শুরু হবে।

ট্যাগঃ
রিপোর্টারের সম্পর্কে জানুন

Rajbari Mail

জনপ্রিয় পোস্ট

বালিয়াকান্দিতে আনারস প্রতীকের দুই সমর্থকে হাতুড়ী পিটিয়ে জখমের অভিযোগ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে

গোয়ালন্দে পদ্মার ভাঙনঃ থেমে আছে ঘাট আধুনিকায়ন কাজ

পোস্ট হয়েছেঃ ১১:১৬:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ মে ২০২২

বিশেষ প্রতিনিধিঃ পদ্মা-যমুনা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। নদীতে স্রোত এবং ঝড়ো বাতাসে এবার আগে ভাগেই ভাঙন শুরু হয়েছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ঘাট এলাকায়। অথচ এই বর্ষা মৌসুমের আগেই দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটকে আধুনিক নৌবন্দরে উন্নীত করনের কাজ শুরুর কথা ছিল। এখন পর্যন্ত তার কোন গতি না দেখায় বর্ষার আগে কাজ শুরু নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর ফাইল চালাচলি ও বুয়েটের ছাড়পত্রের অপেক্ষায় আটকে আছে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাট নৌবন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্পের কাজ। পাউবোর দাবী, প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের বরাদ্দের অর্থ দিয়ে কাজ শুরু করতে অনুমোদনের জন্য বিআইডব্লিউটিএকে চিঠি দিয়েও তার উত্তর মিলছেনা। বিআইডব্লিউটিএ বলছে, জমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় এবং বুয়েট থেকে চুড়ান্ত নকশার অপেক্ষায় আছেন। ফলে ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়তে যাচ্ছে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট, ফেরি ঘাটসহ আশপাশের জনপদ। ভাঙন ঝুঁকিতে থাকবে দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের ৮টি গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবার।

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট ও এর পশ্চিমে দেবগ্রাম প্রান্তে ৬ কিলোমিটার এবং পাটুরিয়া ঘাটের দুই কিলোমিটার স্থায়ীভাবে আধুনিকায়ন করতে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক গত বছর জানুয়ারীতে ৬৮০ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শুরু করতে না পারায় এবং নির্মাণ সামগ্রীর উর্দ্বগতির কারনে কাজের বর্তমান ব্যায় বাড়িয়ে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৩৫১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। বর্ষার আগেই কাজের অনুমোতি চেয়ে পাউবো ২৭ এপ্রিল বিআইডব্লিউটিএ প্রকল্প পরিচালকের কাছে চিঠি দিয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া লালু মন্ডল পাড়া পদ্মার পাড়ে শূণ্য ভিটায় ছোট্র একটি মুদি দোকান করে দুলাল মন্ডল আশায় আছেন যদি নদী শাসনের কাজ শুরু হয় তাহলে চিন্তা নাই। দুলাল মন্ডল বলেন, ঈদে আগে বৃষ্টি শুরু থেকে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে তার প্রায় ৭ বিঘা জমি বিলীন হয়েছে। এখন শূন্য ভিটায় ছাপড়া ঘর আর দোকান ছাড়া কিছুই নেই তার।

দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল বলেন, প্রতি বছর শুধু মাপঝোপ হয়, কাজ কিছুই হয়না। চার বছর ধরে স্থায়ী কাজ হবে বলে শুনছি। বিআইডব্লিউটিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের স্বার্থ হাসিলে পানি বৃদ্ধির সময় জিওব্যাগ ফেলে। বর্ষার আগে কাজ শুরু না হলে লঞ্চ ও ফেরিঘাটসহ আশপাশের পাঁচটি গ্রামের প্রায় ৮০০ পরিবার ভাঙন ঝুঁকিতে থাকবে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা মুন্সী বলেন, গত কয়েক বছরে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন হয়েছে। ভূমিহীন হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। লঞ্চ ও ফেরি ঘাট ভাঙনের শিকার হয়েছে কয়েকবার। আমরা অতি দ্রুত ঘাট এলাকাকে স্থায়ীভাবে রক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি।

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, ২৭ এপ্রিল বিআইডব্লিউটিএ প্রকল্প পরিচালকের কাছে কাজ শুরুর অনুমোতি চেয়ে চিঠি দিয়েছি। এখন পর্যন্ত তার জবাব না আসায় কাজ শুরু করতে পারছিনা। বর্ষার আগে কাজ শুরু না হলে ভাঙন দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে কাজ করবো। তবে এটা স্থায়ী কোন সমাধান নয় বলেও তিনি মনে করেন।

বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, দৌলতদিয়ায় ৬ এবং পাটুরিয়ায় ২ কিলোমিটার এলাকায় আধুনিকায়নের জন্য ১ হাজার ৩৫১ কোটি ৭০ লাখ টাকা একনেক থেকে পাশ হয়েছে। তবে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় জমি অধিগ্রহণের কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সম্পন্ন হয়ে আসেনি। এছাড়া বুয়েট থেকে নকশার চুড়ান্ত অনুমোদন হয়ে আসেনি। যে কারনে কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নদী বন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্পের পরিচালক ও বিআইডব্লিউটিএর তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারিকুল হাসান বলেন, ২১ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করতে এবং যাত্রী সেবার মান উন্নয়নে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাট আধুনিকায়নে ১৩৫১ কোটি ৭০ লাখ টাকার প্রকল্প একনেকে পাস হয়েছে। দৌলতদিয়া এবং পাটুরিয়ায় ৮টি করে ফেরি ঘাট, পৃথক লঞ্চ ঘাট, সড়ক নির্মাণসহ নদীর তীর রক্ষায় কাজ হবে। বুয়েট থেকে নকশার চূড়ান্ত ডিজাইনের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। এছাড়া জমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন এবং নকশা হাতে পেলেই কাজ শুরু হবে।