ঢাকা,
শনিবার , ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
মইন মৃধা ও ফিরোজ আহম্মেদ, গোয়ালন্দঃ ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলাধীন দৌলতদিয়ার দেড় কিলোমিটার এলাকায় সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের রোপনকৃত চার বছর বয়সী গাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ৫৪১টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে ফেলেছে। এসব গাছ মানুষজন টেনে নেওয়ায় স্থানীয় শর্ষে, পেয়াঁজ ও রসুন খেতও নষ্ট করে ফেলেছে।
বন কর্মকর্তাদের অভিযোগ, মহাসড়কের পাশে এইচবিবির রাস্তা তৈরীতে খননকাজে নিয়োজিত স্কেভেটর চালকের হুকুমে রেললাইনের পাশে বসবাসরত লোকজন গাছ কেটে নেয়। তবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ থেকে এ ধরনের কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলে সওজ দাবী করেছেন।
গোয়ালন্দ উপজেলার বন কর্মকর্তা (ফরেষ্টার) মো. মনিরুজ্জামান খান জানান, মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের উপকারভোগী সমিতির সদস্যরা গাছ কাটার কথা জানান। খবর পেয়ে রাতেই তিনি দেখতে পান, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পূর্ব পাশে বাফার সারের গোডাউনের পর থেকে কেকেএস সেফহোম পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রোপনকৃত সমস্ত গাছের চারা কেটে ফেলেছে।
স্থানীয় লোকজন থেকে তিনি জানতে পারেন, মহাসড়কের পূর্বপাশে সওজ এইচবিবির কাজ করতে স্কেভেটর দিয়ে মাটি খনন করছে। স্কেভেটর চালক স্থানীয় লোকজনকে রাস্তার সম্প্রসারণের কাজ হবে বলে গাছ কাটতে বলেছে খবর ছড়িয়ে পড়লে রেললাইনের পাশে বসবাসরত ও ফকির পাড়ার লোকজন সমস্ত গাছ কেটে নিয়ে যায়।
সামাজিক বনায়ন প্রকল্প বাগানের সভাপতি আব্দুল আহাদ বলেন, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের বৃক্ষরোপন তহবিল থেকে বাংলাদেশ হ্যাচারী থেকে রেলগেট পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা ব্যায়ে প্রায় ৪ হাজার চারা গাছ রোপন করা হয়। এরমধ্যে চিকরাশি, সেগুন, মেহগনি, আকাশমনি, শিশু, এ্যাকাশি ও বকাইনিম রয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর কেকেএস সেফহোম থেকে বাফার সারের গোডাউন পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকার ৫৪১টি গাছ গোড়া থেকে কেটে নিয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত ১১-১২ জনের নাম পাওয়া গেছে।
স্থানীয় ফকির পাড়ার সিদ্দিক মন্ডল, হাসমত সরদার, মজিবর মন্ডল সহ কয়েকজন বলেন, মঙ্গলবার বিকেলেও তারা খেত ভালো দেখেছেন। সকালে এসে দেখেন সরিষা, পেঁয়াজ, রসুন খেত নষ্ট করে ফেলেছে। জমির ওপর দিয়ে গাছপালা টেনে নেওয়ায় অনেক ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
বন বিভাগ রাজবাড়ীর জেলা রেঞ্জার মো. হাবিবুজ্জামান বলেন, রাতে জানার পর তাৎতক্ষনিক গোয়ালন্দের ফরেস্টারকে তদন্ত সাপেক্ষে গাছ কাটার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জেনেছি, সওজর রাস্তার পাশে নিয়োজিত ভেকু চালকের নির্দেশের স্থানীয় গ্রামের লোকজন জোটবদ্ধ হয়ে সমস্ত গাছ কেটে ফেলেছে। বিষয়টি সওজর নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়েছি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নওজিস রহমান বলেন, মহাসড়কের পাশে পায়ে চলার জন্য এইচবিবির কাজ চলছে। গাছগুলো সড়কের ঢালুতে রোপন করা। এ কাজের সাথে গাছ কাটার কোন সম্পর্ক নেই। গাছ কাটার প্রয়োজন হলে বনবিভাগকে চিঠি দিয়ে জানাতাম। বনবিভাগের জেলা রেঞ্জার রাতেই আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে। তৃতীয় কোন পক্ষ ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে কি না তাঁকে খতিয়ে দেখতে বলেছি। তারপওর ভেকু চালক জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন বলেন, সড়কের পাশ থেকে রাতের মধ্যে এতগুলো গাছের চারা এভাবে কেটে ফেলা ন্যাক্কারজনক। বিষয়টি আমি পরে জানতে পেরেছি। খোঁজ নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বনবিভাগতে অনুরোধ করবো।
