নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজবাড়ীঃ রাজবাড়ীতে চুরির অভিযোগে শাহিন শেখ ওরফে রুপল শেখ (২৭) নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন শেষে এক আসামির বাড়িতে হামলার চেষ্টা চালান বিক্ষুদ্ধ জনতা। এতে বাধা দিলে রোববার বিকেলে সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের রাজাপুর মধ্যপাড়ায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনাঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ বছির কবিরাজ (৩৮) নামের মূল পরিকল্পনাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে।
তিনি রাজবাড়ী রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের ধুলদী লক্ষীপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান কবিরাজের ছেলে। সোমবার দিবাগত রাতে সদর থানা পুলিশ তাকে সদর উপজেলার রঘুনাথপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।
আহত দুই পুলিশ সদস্য রাজবাড়ী সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাব্বির হোসেন, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শেখ আবুল হাশেম। তাঁদেরকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় রোববার (১৮ মে) রাতে এসআই সাব্বির বাদী হয়ে ১২জনকে চিহিৃত এবং অজ্ঞাত ২৫ থেকে ৩০জনকে আসামি করে মামলা করেন। পুলিশ আসামি মনির হোসেন মোল্লা ও মোসলেম মোল্লাকেও গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, কয়েকদিন আগে রাজাপুর মধ্যপাড়া গ্রামের শামসুদ্দিন বিশ্বাস ওরফে শাম বিশ্বাসের বাড়ির পানির পাম্প চুরি হয়। এতে সন্দেহ করেন একই এলাকার দিনমজুর শাহিনকে। গত শুক্রবার সন্ধ্যার আগে সালিসের কথা বলে কয়েকজন শাহিনকে ডেকে শামসুদ্দিনের বাড়িতে নিয়ে যান। পরে শামসুদ্দিন ও জহির উদ্দিন বিশ্বাসের নির্দেশে ১৫ থেকে ২০জন মিলে শাহিনকে খুটির সঙ্গে বেধে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পেটান। এসময় তার দুই পা রক্তাত্ব জখম করা হয়। এক পর্যায়ে শাহিন অচেতন হয়ে পড়লে সবাই পার্লিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন শাহিনকে উদ্ধার করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ রাতে পৌনে ১১টার দিকে হাসপাতাল থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরদিন শনিবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠায়। রাতে শাহিনের মামা কালাম মোল্লা বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৮জনকে আসামি করে মামলা করেন। স্থানীয় কয়েকজন জানান, চুরির অভিযোগের পাশাপাশি এক নারীর গোসলের ভিডিও ধারণের কারণেই শাহিনকে ডেকে নিয়ে মারধর করা হয়েছিল।
এদিকে শাহিন হত্যার বিচারের দাবিতে রোববার বিকেল চারটার দিকে এলাকাবাসীর ব্যানারে রাজাপুরে মানববন্ধন হয়। মানববন্ধন শেষে বিক্ষুদ্ধ লোকজন শাহিন হত্যা মামলার আসামি মোক্তার বিশ্বাসের বাড়িতে হামলা করে। একপর্যায়ে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করলে এসআই সাব্বির হোসেন ও এএসআই শেখ আবুল হাশেম বাধা দেন। এ সময় হামলাকারীরা লোহার রড ও ইট দিয়ে দুই পুলিশ সদস্যকে মারধর করেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। সেই সঙ্গে আহত দুই পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান বলেন,শাহিন হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি জহির উদ্দিন বিশ্বাসসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায়ও পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।