নিজস্ব প্রতিবেদক, কালুখালী, রাজবাড়ীঃ রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মোহনপুর গ্রামের বিলের ধানখেত থেকে ২৫ অক্টোবর উদ্ধার হওয়া অর্ধগলিত অজ্ঞাত নারীর পরিচয় মিলেছে। ওই নারীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে পাংশায় এনে গণধর্ষণের পর হত্যা করে কালুখালী উপজেলার নির্জন বিলের ধানখেতে ফেলে রাখে। এ ঘটনায় তিনজন জড়িত থাকলেও পুলিশ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

অজ্ঞাত গৃহবধু টাঙ্গাইল ঘাটাইল উপজেলার আথাইল শিমুলিয়া এলাকার মেয়ে। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন জেলার পাংশা উপজেলার গোপালবাড়ি বনগ্রামের মৃত হাসেম মিয়ার ছেলে আমিন মিয়া (৩৬) এবং একই উপজেলার মাদুলিয়া গ্রামের মৃত জব্বার মন্ডলের ছেলে মোনছের মন্ডল (৩৮)। গ্রেপ্তারকৃতদের রোববার বিকেলে আদালতে পাঠানো হলে সন্ধ্যার পর বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে আমিন মিয়া জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার মোছা. শামিমা পারভীন।

পুলিশ জানায়, ২৫ অক্টোবর কালুখালী উপজেলার মাজবাড়ী ইউনিয়নের মোহনপুর গ্রামের পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার বিলের ধানখেত থেকে থানা পুলিশ অর্ধগলিত অজ্ঞাত এক নারীর লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় কালুখালী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়। মামলার পর থেকে পুলিশ সুপারের দিক নির্দেশনা হত্যার রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করে কালুখালী থানা ও গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পৃথক দল।

মামলার তদন্তকালে ৮ অক্টোবর ওই ধানখেত থেকে পুলিশ একটি ভ্যানিটি ব্যাগ উদ্ধার করে। ভ্যানিটি ব্যাগ থাকা জাতীয় পরিচয়সহ অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে অজ্ঞাত নারীর পরিচয় নিশ্চিত করে। তার পরিবারকে জানালে গৃহবধুর বাবা বাদী হয়ে কালুখালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার আলোকে পুলিশ তদন্ত সাপেক্ষে শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে প্রথমে পাংশা উপজেলার মাদুলিয়ার নিজ বাড়ি থেকে মোনছের মন্ডলকে গ্রেপ্তার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গোপালবাড়ি বনগ্রাম থেকে আমিন মিয়াকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) শরীফ আল রাজীব বলেন, প্রায় ১০ বছর আগে টাঙ্গাইলের গোপালপুরে ওই নারীর বিয়ে হয়। দাম্পত্য কলোহের কারনে দুই বছর আগে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হলে এক ছেলে সন্তান নিয়ে বাবার বাড়ি ঘাটাইলে থাকতেন। কয়েক মাস আগে আমিন মিয়ার ফোন থেকে পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে। পরে আমিনের বন্ধু মোনছের মন্ডলের সঙ্গেও সখ্যতা গড়ে উঠে। ১৮ অক্টোবর তারা যুক্তি করে গৃহবধুকে খবর দিয়ে পাংশায় মোনছেরের বাড়িতে রাখেন।

২০ অক্টোবর মোনছেরর বাড়ির পিছনে একটি বাগানে গণধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডে তারা তিনজন অংশ নেয়। পরে তারা গৃহবধুর মৃতদেহ কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে ভ্যানযোগে পাংশার মাদুলিয়া থেকে কালুখালী মোহনপুর পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার বিলের নির্জন ধানখেতে ফেলে রাখে। গ্রেপ্তারকৃতদের রোববার সন্ধ্যায় আদালতে দোষ স্বীকার করে আমিন মিয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তবে মোনছের মন্ডল দোষ স্বীকার না করায় রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। আদালত শুনানি শেষে তাদেরকে রাতেই কারাগারে পাঠানো হয়েছে।