oplus_0
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজবাড়ীঃ রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীকে কারাগারে প্রেরণ করেছে আদালত। সোমবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তাঁকে রাজবাড়ী সদর আমলি আদালতে তোলা হলে আদালতের বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো. তামজিদ আহমেদ জামিন না মঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে রোববার দিবাগত গভীররাতে ঢাকা মহানগরের গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল তাঁকে রাজধানীর মহাখালী এলাকার এক নিকট আত্মীয়ের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। রাতে তাঁকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি রাজবাড়ী জেলা পুলিশকে নিশ্চিত করে। রাজবাড়ী থেকে পুলিশের একটি বিশেষ দল রাতেই ঢাকায় পৌছে কাজী কেরামতকে নিয়ে আজ সকালে রাজবাড়ী ফিরেন। কাজী কেরামত আলীর বিরুদ্ধে রাজবাড়ী সদর থানায় বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে মামলা রয়েছে। সোমবার সকাল নয়টার দিকে কাজী কেরামত আলীকে রাজবাড়ী কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক মো. জসীম উদ্দিনের কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়। বেলা ১১টা ৪৫মিনিটের দিকে রাজবাড়ী সদর আমলি আদালতে তোলা হয়। ১১টা ৫১মিনিটে আদালত কক্ষ থেকে বের করে কারাগারে নেয়া হয়। পুলিশের কড়া পাহারায় আদালতে তোলার সময় আদালত পাড়ায় বহিরাগত কিছু লোক ভুয়া ভুয়া বলে শ্লোগান দেয়।
oplus_0
কাজী কেরামত আলী রাজবাড়ী শহরের সজ্জনকান্দা এলাকার বাসিন্দা। তিনি প্রয়াত গণপরিষদ সদস্য কাজী হেদায়েত হোসেন এর বড় ছেলে। তিনি রাজবাড়ী-১ (রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ) আসনের পাঁচবারের নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য। এছাড়া তিনি মাদরাসা ও কারিগরি মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন। তিনি রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
কাজী কেরামত আলীর জামিনের বিরোধীতা করে রাজবাড়ী জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ও বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের দায়েরকৃত মামলার আইনজীবী নেকবার হোসেন বলেন, কাজী কেরামত এবং তাঁর ভাই কাজী ইরাদতসহ কাজী পরিবার জেলার রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতো। ১৫ বছর ৭ মাসের ক্ষমতায় তারা সকল ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করতো। চাকরী বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, বালু মহাল দখল সহ সকল ক্ষেত্রে তারা নিয়ন্ত্রণ করতো। আজ কাজী কেরামত আলীকে আদালতে তোলা হলে কিছু আইনজীবি তাঁর জামিনের আবেদন করলেও আমরা সর্বোচ্চ বিরোধিতা করেছি। আদালত আমাদের কথা বিবেচনা করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
oplus_0
রাজবাড়ী আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুর রাজ্জাক-২ বলেন, রাজবাড়ী সদর থানায় ৩০ আগষ্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থী রাজীব মোল্লার দায়েরকৃত মামলার এজাহারভুক্ত দুই নম্বর আসামি ছিলেন কাজী কেরামত আলী। মামলায় ১৭০জনকে চিহিৃত এবং অজ্ঞাত ৩০০জনকে আসামি করা হয়। ১৮জুলাই বিকেল ৩টার দিকে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের রাজবাড়ী শহরের বড়পুল এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে ছাত্র-জনতা, শিক্ষক, অভিভাবক সমবেত হলে মামলার আসামিরা দেশীয় হামলা চালায়। ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় আদালত তাঁর জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দিন কাজী কেরামত আলীর শহরের সজ্জনকান্দার পৈত্রিক বাড়ি ভাঙচুর শেষে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া সদর উপজেলার কোলারহাটে অবস্থিত নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। মাছ ও মুরগির খামার থেকে সমস্ত মাছ এবং মুরগি লুটপাট করা হয়। ওই দিন স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে কাজী কেরামত আলী রাজবাড়ী জেলা শহর ছেড়ে পলাতক ছিলেন।