নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজবাড়ীঃ রাজবাড়ী সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বেলগাছি রেলওয়ে ষ্টেশন পুনঃচালুকরণ এবং পুণর্নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলগাছির সর্বস্তরের জনগনের ব্যানারে সোমবার বেলা এগারটা থেকে বারোটা পর্যন্ত ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। বেলগাছি রেলষ্টেশন চত্বরে আয়োজিত কর্মসূচিতে বেলগাছি ও খানগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার কয়েকশ মানুষ অংশ নেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি খন্দকার অনিকের সঞ্চালনায় মানববন্ধনকালে বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি মিনহাজ চৌধুরী, তানজিব ফাহিম, মেহেদি সজল প্রমূখ। কর্মসূচি পালনকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ছাড়াও বেলগাছি রেলষ্টেশন এলাকার বাসিন্দা, বাজার ব্যবসায়ী ও খানগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত কয়েকশ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ গ্রহণ করেন। এসময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধন থেকে রেলষ্টেশন পুনঃচালুকরণ ও পুণর্নির্মাণসহ ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নের কর্মসূচি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে আধুনিক মানের ষ্টেশন পুনঃনির্মাণ, ষ্টেশন পুনরায় চালু করা, ষ্টেশনে কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োজিত করা, জনসাধারণ ও কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের চলাচলের জন্য ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণ, ষ্টেশনের পূর্বপাশে রেলগেটে গেটম্যান নিয়োগ প্রদান, ডাবল লাইন পুনরায় চালু, প্লাটফর্মে যাত্রীদের বসার স্থান, গণসৌচাগার নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সকল ট্রেন ষ্টেশনে দাঁড়ানোর দাবি জানান। এছাড়া উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সরাসরি ট্রেন চালু এবং নতুন করে ট্রেন দেওয়ার দাবি জানানো হয়। ৮দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। প্রয়োজনে ঢাকাগামী আন্তঃনগর মধুমতি ট্রেন বন্ধ করে দেয়ার হুশিয়ারি করেন।
জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে বেলগাছি থানা ছিল। পদ্মা নদীর কোলঘেঁষে স্থাপিত বেলগাছি ষ্টেশনে কোলকাতা থেকে ব্যবসায়ীরা আসতো। ষ্টিমার জাহাজের যাত্রী এবং কুলিদের পদচারণায় মুখর থাকতো ষ্টেশনটি। নিয়মিত কয়েকটি ট্রেন থামতো। অথচ কালের বিবতর্ণে বেলগাছি ষ্টেশনের জৌলুস নেই। প্রায় ১৫ বছর ধরে ষ্টেশনে নেই কোন মাষ্টার, কর্মচারী। নেই কোন সৌচাগার বা বিশ্রামাগার। জড়াজীর্ণ বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার মানুষ রেলওয়ে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মিনহাজ চৌধুরী ও তানজিব ফাহিম বলেন, প্রতিদিন বেলগাছি ষ্টেশন থেকে শত শত শিক্ষার্থী ট্রেনে রাজবাড়ী সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়া করে। ব্যবসায়ী বা চাকুরীজীবীরা তাদের কর্মস্থলে যাতায়াত করেন। অথচ ষ্টেশনের কার্যক্রম না থাকায় তাদেরকে বিকল্প উপায়ে আসা যাওয়া করতে হয়। বর্তমানে সকালের মেইল ট্রেন সকাল ৬টায় বেলগাছি হয়ে রাজবাড়ী ষ্টেশনে গিয়ে বিকেল ৪টায় ফিরে আসার কথা থাকলেও কোনদিন সন্ধ্যায় আসে। ভাটিয়াপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বেলগাছি হয়ে রাজবাড়ী গিয়ে বিকেল সাড়ে ৪টায় ফিরে আসার কথা থাকলেও বেশিরভাগ সময় সন্ধ্যায় ফিরে। মাত্র দুটি ট্রেন এই ষ্টেশনে অনিয়মিত বিরতি দেয়।
রেলওয়ে রাজবাড়ীর সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বেলগাছি ষ্টেশন পুনঃনির্মাণের ব্যাপারে প্রায় এক বছর আগে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন ফলাফল পাইনি। ষ্টেশন চালুর ব্যাপারে ট্রাফিক বিভাগ বলতে পারবে। তবে সার্বিক বিষয়ে উর্দ্বোতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।