নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজবাড়ীঃ রাজবাড়ীতে আলোচিত নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবার এলাকায় থম থমে অবস্থা বিরাজ করছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। উৎসুক জনতা এক নজর দেখতে ভিড় করছে। দরবারের ভিতর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ধ্বংস স্তুপ। মাঝেমধ্যে আগুনের ধোয়া বের হতে দেখা যাচ্ছে।
নুরাল পাগলার বিষয়কে কেন্দ্র করে পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর ঘটনায় গোয়ালন্দ ঘাট থানায় মামলা হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ৫ মিনিটে থানার এসআই সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন গ্রেপ্তার নেই।
শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫নম্বর ওয়ার্ড জুড়ান মোল্লার পাড়ায় অবস্থিত নুরাল পাগলার দরবারের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ। বিভিন্ন স্থান থেকে আগত উৎসুক জনতা ভিড় করছে। দরবারের ভিতর একটি তিনতলা এবং অপরটি দ্বিতল ভবন। তিনতলা ভবনে পরিবারসহ নুরাল পাগলা রাত্রী যাপন করতেন। প্রতিটি ভবনের সবকটি কক্ষ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। দামি দামি আসবাবপত্র সব খোয়া গেছে। অবশিষ্ট জিনিসপত্র ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। ভবন থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে অবস্থিত নুরাল পাগলার আস্তানা। একটি টিনশেড ঘরে বসে ভক্তদের সঙ্গে সময় কাটাতেন। তাঁর মৃত্যুর আগে টিনশেড ঘরসহ সমতল ভূমি থেকে কয়েকফুট উচুঁ করে বেদি তৈরী করা হয়। বেদির ওপর একপাশে টিনশেড ঘরে তিনি বসে সময় কাটাতেন। ওপর পাশে নুরাল পাগলের কবর দেওয়া হয়। দরবারের ভিতর চারদিকে ধ্বংসস্তুপ। ধ্বংসস্তুপ থেকে এখনও ধোয়া বের হতে দেখা যায়। কেউ কেউ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ধ্বংসস্তুপ থেকে চাল, ডালসহ জিনিসপত্র কুড়িয়ে নিচ্ছেন। পুলিশ মাঝেমধ্যে উৎসুক জনতাকে সরিয়ে দিচ্ছেন আবার দরবার থেকে বের করেও দিচ্ছেন।
[caption id="attachment_25873" align="alignnone" width="300"] oplus_0[/caption]
জানা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে গোয়ালন্দ বাজার আনসার ক্লাব চত্ত্বরে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিতে আসে শত শত মানুষ। বেলা আড়াইটার দিকে হাতুড়ি, শাবল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল লোক মিছিল নিয়ে আসে। এ সময় আয়োজকদের পক্ষ থেকে লাঠিসোঁটা, হাতুড়ি মঞ্চে জমা দিতে বলা হয়। এ ধরনের সরঞ্জাম নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নিতে বারণ করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাঁদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে মঞ্চে বক্তব্য চলাকালে কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক চড়াও হয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। পুলিশের দুটি গাড়ি এবং ইউএনওর গাড়ি ভাঙচুর করেন। এসময় ১০ থেকে ১২জন পুলিশ সদস্য আহত হন।
[caption id="attachment_25874" align="alignnone" width="300"] oplus_0[/caption]
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, বেলা তিনটার দিকে তৌহিদী জনতার ব্যানারে উপস্থিত ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা জালাল উদ্দিন প্রামাণিক, সদস্যসচিব বিএনপি নেতা আইয়ুব আলী খানসহ অন্যান্যরা সবাইকে সমাবেশে থাকার আহ্বান জানান। এই সমাবেশের বাইরে কিছু হলে এর দায় দায়িত্ব তারা বহন করবেন না বলে মাইকে বার বার বলা সত্ত্বেও উত্তেজিত কিছু লোক মিছিল নিয়ে নুরাল পাগলার দরবারে হামলা করেন। ভিতর থেকে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন ভক্ত-খাদেমরা। ইটপাটখেল ও পাথর নিক্ষেপসহ সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি গুরুতর আহত হন। দেয়াল টপকে কয়েকশ লোক ভেতরে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেন এবং বিভিন্ন জিনিসপত্র মালামাল লুটপাট শুরু করেন। এক পর্যায়ে বিকেল পাঁচটার দিকে নুরাল পাগলের লাশ কবর থেকে কফিনসহ তুলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ পদ্মার মোড় এলাকায় সড়কের মাঝে রেখে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সংঘর্ষে আহত রাসেল মোল্লা নামের এক ভক্ত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম তেনাপচা গ্রামের আজাদ মোল্লার ছেলে।
[caption id="attachment_25875" align="alignnone" width="300"] oplus_0[/caption]
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ আগষ্ট বার্ধক্যের কারণে মারা যান নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলা। ওইদিন রাতে মাটি থেকে কয়েক ফুট উঁচুতে বিশেষ কায়দায় আস্তানায় তাঁর লাশ দাফন করেন ভক্তরা। এরপর বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশষ করে কবর সমতল করারসহ কয়েকটি দাবি জানায় স্থানীয় আলেমসহ তৌহিদী জনতা।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জেলা ও উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি ও নুরাল পাগলের পরিবারের কয়েক দফা বৈঠক হয়। তবে কবর নিচু না করায় দুই দফা সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয় ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি। বৃহস্পতিবারের (৪ সেপ্টেম্বর) মধ্যে কবর সমতলসহ বিভিন্ন দাবি জানায়। অন্যথায় শুক্রবার জুমার নামাজের পর গোয়ালন্দ আনসার ক্লাব মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং পরবর্তীতে ‘মার্চ ফর গোয়ালন্দ’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়।
[caption id="attachment_25876" align="alignnone" width="300"] oplus_0[/caption]
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি রাকিবুল ইসলাম বলেন, পুলিশের ওপর হামলায় অন্তত ১০ থেকে ১২জন সদস্য আহত হয়েছেন। হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ৫ মিনিটে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা করেছেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার বা আটক নেই। নুরাল পাগলার দরবারে হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত পরিবার থেকে কোন অভিযোগ দেয়নি।
কারিগরি সহযোগিতায়: মাহামুদ ফিউচার আইটি
কপিরাইটঃ রাজবাড়ী মেইল।