নিজস্ব প্রতিবেদক, গোয়ালন্দঃ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট এলাকা ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে। দৌলতদিয়ার ৭টি ফেরি ঘাটের মধ্যে ১, ২, ৩ ও ৭ নম্বর এই চারটি ঘাট ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। সরেজমিন পরিস্থিতি দেখতে সোমবার দুপুরে প্রতিটি ঘাট এলাকা পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক।

বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয় জানায়, গত বছর দৌলতদিয়ার বাহির চর ছাত্তার মেম্বার পাড়ায় প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যায়ে সংযোগ সড়কসহ ৭নম্বর ঘাট নির্মাণ করা হয়। চলতি বছরের মে মাসের শেষ সপ্তাহে লোওয়াটার লেভেল বা নিচু স্তরের ঘাটটি চালু করা হয়। দেড় মাস পর ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পড়লে আগামী ৬ মাসের নির্মাণ ব্যায়সহ প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যায়ে পাশেই মিডওয়াটার লেভেল ঘাট তৈরী করে ৯ জুলাই চালু করা হয়। বর্তমানে বন্যার পানি বাড়ার সাথে পদ্মায় প্রচন্ড স্রোত দেখা দেয়ায় ৭নম্বর সহ ১, ২ ও ৩ নম্বর ঘাট ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক এর সাথে সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী মো. মহিদুল ইসলাম, পরিচালক মো. শাহজাহান, মো. রফিকুল ইসলাম, বিডব্লিউডিবি’র প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হাকিম, আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নিজাম উদ্দিন পাঠান, গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা মুন্সী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুল হক, পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম মন্ডল, উপজেলা আ.লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁরা পাটুরিয়া থেকে স্পীডবোটে দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাট থেকে প্রতিটি ফেরি ঘাট এলাকা ঘুরে সর্বশেষ ৭ নম্বর ফেরি ঘাট এলাকায় নামেন।

এ সময় ইউএনও আজিজুল হক খান বলেন, এখানকার মানুষ প্রতিটিরাত ভাঙন আতঙ্কে পার করছে। এসব মানুষের বসতভিটা টিকিয়ে রাখতে হবে। তাদের রক্ষা করেই ফেরি ঘাটের ভাঙন প্রতিরোধে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে ঘাটের সাথে এলাকার ঘর বাড়ি হারিয়ে সবাই বাস্তু হারা হয়ে পড়বে।

উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা মুন্সী বলেন, লঞ্চ ঘাট থেকে শুরু করে প্রতিটি ফেরি ঘাট ভাঙন ঝুঁকিতে। স্থানীয় মজিদ শেখের পাড়া, সিদ্দিক কাজী পাড়া ও ছাত্তার মেম্বার পাড়ার প্রায় এক হাজার পরিবার ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলানো ছাড়া কাজের কাজ কিছু হয়না। প্রতি বছর এভাবে বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকানো যাবে না।

তিনি ক্ষোভের সাথে আরো বলেন, বহুদিন ধরে শুনছি ফেরি ঘাট এলাকায় নদী শাসন হবে। এভাবে তো চলতে পারেনা। এলাকার মানুষ ভোট দিয়ে আমাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেছে। তাদের রক্ষায় যদি কাজে না আসি তাহলে আমাদের থেকে লাভ কি? বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষন করে তিনি অনতি বিলম্বে ভাঙন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানান।

বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, লঞ্চ ঘাট ও ১, ২, ৩ এবং ৭ নম্বর ফেরি ঘাট ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। ঈদের আগেই অন্তত ৬টি ফেরি ঘাট চালু রাখতে চাই। নবনির্মিত ৭নম্বর ঘাট রো রো ফেরির জন্য করা হয়েছে। ১, ২ ও ৩নম্বর ঘাট ভাঙন ঝুঁকিতে থাকলেও তা চালুর ব্যবস্থা করা হবে। আপাতত ভাঙন এলাকায় জরুরীভাবে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলানো হবে। আগামী নভেম্বরের মধ্যে ঘাট আধুনিকায়ন করতে ফেরি ঘাট এলাকার ২ কিলোমিটার এবং আপের ৪ কিলোমিটার নদী শাসনের কাজ শুরু হবে।